শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল টুলসে্‌র ব্যবহার

‘করোনা মহামারি শুরুর পর প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা শিক্ষকরা বিভিন্ন ডিজিটাল টুলসে্‌র সাথে পরিচিত হয়েছি, পাঠদানের ক্ষেত্রে সেগুলো ব্যবহার করেছি। আর তখনই আমরা বুঝতে পারি, কত সহজে এই টুলগুলো ব্যবহার করে কুইজ-ক্লাস টেস্ট নেওয়া যায়, এসাইনমেন্ট করা যায়। এমনকি গুগল ক্লাসরুমের মতো টুল ব্যবহার করে পরীক্ষা পর্যন্ত নিয়েছি আমরা।’ শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন ঢাকার সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নাহিয়ান হোসেন।

চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর চলপড়ি আয়োজিত টিচার্চ ডে স্পেশাল লাইভে অংশ নেন তিনি। কথা বলেন বাংলাদেশের নতুন পাঠ্যক্রম, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল বিভিন্ন মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে। লাইভটি সঞ্চালনা করেন চলপড়ি’র পার্টনারশিপ অ্যান্ড সেলস ম্যানেজার মুহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন হাসিব।

নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মো. নাহিয়ান হোসেন স্যার বলেন, বর্তমান পাঠ্যক্রমে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শুধু বইয়ের পড়ার মধ্যেই শেখাকে সীমাবদ্ধ না রেখে সেটিকে বাস্তবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথাগত শিক্ষার থেকে কিছুটা ভিন্ন হলেও এটি একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এ প্রসঙ্গে চলপড়ি ওয়েবসাইটের উদাহরণ এনে তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন অ্যানিমেটেড ভিডিও, অডিওর মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে বইয়ের পড়ার একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের জন্য বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নে এভাবেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা দূর করতে পারে।

কিন্তু ক্লাসরুমে শেখার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি কেন জরুরি? মো. নাহিয়ান হোসেন স্যারের মতে, ক্লাসরুমে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষকের সক্ষমতা বাড়াবে, তাকে আরও কর্মোদ্যমী ও পারদর্শী করে তুলবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, খাতা-কলমে কুইজ টেস্টের বদলে গুগল অ্যাপ্লিকেশন বা চলপড়ি’র প্র্যাকটিস সেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শেখার বিষয়টি যাচাই করা বেশি সুবিধাজনক। কেননা এতে শিক্ষার্থীর মাঝে আনন্দ নিয়ে পড়া বা পরীক্ষা দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তার একঘেয়েমি দূর হয়, আবার শিক্ষকের সময়ও বাঁচে। তিনি ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের আরও মনোযোগী করে তোলা ও পাঠকে আকর্ষণীয় করে তোলার সুযোগও পান।

দেখে নিই লাইভ ভিডিও

আবার শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগতভাবে নিজের মতো করে শেখার ক্ষেত্রে ডিজিটাল টুলগুলোকে খুবই উপযোগী বলে মনে করেন নাহিয়ান স্যার। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গণিতের বিভিন্ন ভিডিওর প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত ভিডিওর মাধ্যমে গণিতের সমস্যাগুলো সহজভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপনের চেষ্টা করি। ইউটিউব চ্যানেলে সেগুলো আপলোডের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় বসেই তার গণিত শেখার কাজটি করে ফেলতে পারবে।’ ক্লাসরুমের পাশাপাশি অনলাইনে ডিজিটাল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকেই শেখার সুযোগ করতে পারাটা ডিজিটাল টুলসের অন্যতম বড় একটি উপযোগিতা। এই যেমন চলপড়িতেও এনসিটিবির বই অনুযায়ী গণিত ও ইংরেজির সব পাঠ রয়েছে। এগুলো কিন্তু একজন শিক্ষার্থী তার বাসাতে বসেই, দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যবহার করতে পারবে। এতে তার ক্লাসের পড়াও হয়ে গেল, আবার চলপড়ির বিভিন্ন কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতেও তার অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হলো। অর্থাৎ চলপড়ি তার প্রাইভেট টিউটরের মতো কাজ করতে পারে।’

তবে শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে ডিজিটাল টুলস্‌ অতিরিক্ত সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে অনেকের মনে। এ ব্যাপারে নাহিয়ান স্যার বলেন, ‘অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই। বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার করবেই। কিন্তু তারা যেন এই ব্যবহারটা ভালো কিছু শেখার ক্ষেত্রে করে, আনন্দের সাথে যেন নিজেদের পড়ার জন্যই ব্যবহার করে, এ ব্যাপারটি অভিভাবককে যত্ন নিয়ে, শিশুকে বুঝিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। আর ক্লাসরুমেও যেহেতু ডিজিটাল মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই শিক্ষকরাও এগুলোর ফলপ্রসূ ব্যবহার নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের সচেতন করবেন।’

লাইভের শেষে চলপড়ি’র আরও মানোন্নয়নে বইয়ের পড়ার বাইরেও শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় কর্মসূচি আয়োজনের পরামর্শ দেন নাহিয়ান স্যার। এসময় তাঁকে চলপড়ি’র বিভিন্ন কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ, যেমন: বইঘর-এর শিক্ষামূলক বই পড়তে আগ্রহী করার প্রতিযোগিতা ‘ক্লাউড ক্যাচার চ্যালেঞ্জ’, শিক্ষার্থী কতটুকু শিখলো, তা যাচাই করার জন্য ‘প্র্যাকটিস পণ্ডিত চ্যালেঞ্জ’ এবং ‘মডেল টেস্ট‘ ও আসন্ন বিভিন্ন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হয়।

ঘুরে আসি 👉🏼 চলপড়ি ইউটিউব চ্যানেল
ঘুরে আসি 👉🏼 নাহিয়ান স্যারের ইউটিউব চ্যানেল

Author

  • Ms. Pecha

    Good day! I am Ms. Pecha, the teacher of CholPori Pathshala. I am a character created by a grout of educators and artists.

    View all posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *