ঢাকার ১০টি স্বনামধন্য বাংলা মিডিয়াম স্কুল

পরিবারই মানুষের জীবনের সর্বপ্রথম বিদ্যালয়। পরিবার থেকেই আমরা মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই। তবে একজন মানুষের পরিপূর্ণ শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে পরিবারের পরই রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান। এখানেই আমরা সামাজিকতা, সহমর্মিতা, বিশ্বজ্ঞান ও নিয়ম-শৃঙ্খলা সম্পর্কে শিখি। তাই চলুন, আজ আমরা জেনে নিই এমন ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, বছরের পর বছর যারা চমৎকার ফলাফল, অসাধারণ সহশিক্ষা কার্যক্রম ও নিয়ম-শৃঙ্খলার মাধ্যমে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাথে সাথে ধারণা নেওয়া যাক তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে:    

১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের গভর্নর ফিরোজ খান নূনের সহধর্মিণী ভিকার উন নিসা নূন ঢাকায় মেয়েদের একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু করার লক্ষ্যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি বেসরকারি বিদ্যালয়, যার বেইলী রোড (মূল ক্যাম্পাস), ধানমন্ডি, বসুন্ধরা ও আজিমপুর—এই ৪টি শাখায় বর্তমানে প্রায় ২৪০০০+ ছাত্রী শিক্ষালাভ করছে। প্রতিটি শাখায় ২টি শিফটে (প্রভাতী ও দিবা) বাংলা মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়। বেইলী রোড শাখায় ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদানের সুবিধা রয়েছে। স্কুলটির বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা কেকা রায় চৌধুরী।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বেইলী রোড শাখা প্রায় ৬ একর জমির ওপর নির্মিত। এতে রয়েছে প্রশস্ত মাঠ, যেখানে ছাত্রীদের নিয়মিত অ্যাসেম্বলি, বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও স্কুলে ছাত্রীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহশিক্ষামূলক কাজে উৎসাহ দেওয়া হয়। বিভিন্ন খেলাধুলা (ভলিবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি), কারাতে, বিতর্ক, সাইন্স, ল্যাঙ্গুয়েজ ও এনভায়রনমেন্টসহ নানা ক্লাব সংস্কৃতি রয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। প্রতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে ছাত্রীরা আন্তঃ ও অন্তঃস্কুল নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে।    

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ৪টি শাখাতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ২০২৪ সালে স্কুলটিতে বাংলা মাধ্যমে ভর্তি ফি ৮,০০০ টাকা।  ইংরেজি মাধ্যমে এর পরিমাণ ১০,০০০ টাকা।   

১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ঢাকার আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুরে অবস্থিত একটি ক্যাথলিক মিশনারি অল বয়েজ স্কুল। স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্রাদার জুড কস্টেলো, যিনি সেই সময় সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। স্কুলটিতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রদের শিক্ষাদান করা হয়। প্রতিবছর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। স্কুল বিভাগে প্রতিটি ক্লাসে তিনটি সেকশন রয়েছে, যার মধ্যে একটি ইংরেজি মাধ্যমের জন্য। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩.৫ একর আয়তনের বিশাল ক্যাম্পাসে ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ, বাস্কেটবল কোর্ট ও ভলিবল কোর্ট রয়েছে। স্কুলটির প্রধান ভবন সংলগ্ন একটি বড় খোলা অডিটোরিয়ামও রয়েছে, যেখানে দুই হাজারেরও বেশি আসনসংখ্যা রয়েছে। স্কুলের বর্তমান প্রিন্সিপাল ব্রাদার লিও জেমস পেরেইরা। 

সেন্ট যোসেফ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দিয়ে সজ্জিত দুটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি পৃথক ইন্টারনেট ল্যাব, দুটি উন্নত রসায়ন ল্যাব, দুটি পদার্থবিদ্যার ল্যাব ও দুটি জীববিজ্ঞান ল্যাব রয়েছে। এছাড়াও স্কুলটির লাইব্রেরিতে প্রায় ১০ হাজার বই ও ম্যাগাজিন রয়েছে। 

ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় একটি বেসরকারি মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সিস্টার অগাস্টিন ম্যারি ও সাথে আরও ৩ জন হলি ক্রস সিস্টারের উদ্যোগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির স্কুল (প্রথম থেকে দশম) ও কলেজ (একাদশ-দ্বাদশ) শাখা আছে, যেখানে প্রায় ১৮০০ জন ছাত্রী রয়েছে। 

হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাণ হলো এর সহশিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা কুইজ, আবৃত্তি, বিতর্ক ক্লাব, চারু ও কারুশিল্প প্রতিযোগিতা, গার্ল গাইড ও গার্ল স্কাউটে নিয়মিত অংশ নেয়। এছাড়াও এখানে প্রতি বছর বিজ্ঞান মেলা আয়োজিত হয়। স্কুলটি ১৯৯৭ ও ২০০৩ সালে দুইবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘সেরা জাতীয় বিদ্যালয়’ পুরস্কার জিতেছে। স্কুলটির গ্রন্থাগারে সর্বমোট ৮২১৫টি বই রয়েছে। 

হলি ক্রস স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ও বার্ষিক ফি (২০২৪ সালে ১২,৪০০ টাকা) দিয়ে আসন সংরক্ষণ করতে হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি সম্পন্ন করা হয়। 

১৮৮২ সালে শুরু হওয়া সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল ফাদার গ্রেগরী দ্য গ্রুট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি অল বয়েজ মিশনারি স্কুল (বেসরকারি)। স্কুলটিতে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়। বর্তমানে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের মিউনিসিপ্যাল অফিস স্ট্রিটে স্কুলটির ক্যাম্পাস রয়েছে। সেন্ট গ্রেগরীর স্কুল কম্পাউন্ডে লাইব্রেরি ভবন, কম্পিউটার ও বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোর জন্য ল্যাবরেটরি ভবন ও প্রধান একাডেমিক ভবন রয়েছে। স্কুলে একটি বড় খেলার মাঠ ও একটি বাস্কেটবল কোর্টও রয়েছে। স্কুলটিতে সায়েন্স ক্লাব, স্কাউট ক্লাব, চেস ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, ইংলিশ ক্লাবসহ বিভিন্ন বিষয়ক ক্লাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ্যক্রমের বাইরেও সহশিক্ষা কার্যক্রমে যোগ দিতে উৎসাহ দেওয়া হয়। স্কুলটিতে বর্তমানে ৪৫০০+ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। স্কুলের বর্তমান প্রিন্সিপাল ব্রাদার উজ্জল প্লাসিড পেরেরা। 

সেন্ট গ্রেগরী স্কুলে ভর্তির জন্য প্রথম শ্রেণি বাংলা মাধ্যমের ক্ষেত্রে অফেরতযোগ্য (চার্জসহ) ৩২৫ টাকা ও নার্সারি ইংরেজি মাধ্যমের ক্ষেত্রে অফেরতযোগ্য (চার্জসহ) ৫২৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে। 

ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত প্রায় ৫২ একর জমিতে নির্মিত ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে। পাকিস্তানের তৎকালীন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী জনাব হাবিবুর রহমান বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই অল বয়েজ স্কুলটিতে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। দুই শিফটে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ৫৫৫০। শ্রেণিকক্ষগুলোতে সাউন্ড সিস্টেম ও স্মার্ট বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, আইসিটি, জীববিদ্যা, গণিত ও ভূগোলের জন্য ল্যাব এবং ২০,০০০টিরও বেশি বই, জার্নাল, সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনসহ একটি লাইব্রেরি রয়েছে। 

তৃতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ছয়টি ছাত্রাবাস রয়েছে, যেগুলো ‘হাউস’ হিসেবে পরিচিত। প্রতিটি হাউজে একটি কমন রুম, একটি অফিস রুম, একটি ডাইনিং হল, একটি ছোট লাইব্রেরি, রান্নাঘর, বাগান ও প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি হাউজ তত্ত্বাবধানের জন্য একজন হাউস টিউটরসহ একজন হাউস মাস্টার আছেন। এছাড়াও আছে একজন হাউস প্রিফেক্ট ও একজন হাউস এল্ডার, যাদের সবচেয়ে সিনিয়র ক্লাসের ছাত্রদের মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হয়। প্রতিটি হাউজে একজন ম্যাট্রন এবং একজন স্টুয়ার্ড রয়েছেন, যারা শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা এবং তাদের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে সহায়তা করেন। রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ তৈরিতে গুরুত্ব দেয়। শিক্ষার্থীদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগের পাশাপাশি প্রতিবছর স্কুল ক্যাম্পাসে সরস্বতী পূজা উদ্‌যাপিত হয়। ডিআরএমসি-এর বিশাল ক্যাম্পাসটিতে শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলার সুযোগের সাথে সাথে বিজ্ঞান, নান্দনিকতা ও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত ১৯টি ক্লাবেরও ব্যবস্থা রয়েছে। 

স্কুলটিতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ক্লাস পরিচালিত হলেও ৩য়, ৬ষ্ঠ ও ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা/লটারি ও ভাইভার ওপর ভিত্তি করে নতুন ছাত্র ভর্তি হতে পারে। তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রের মাসিক সর্বোচ্চ বেতন প্রভাতী শাখায় ১৭,১৭২ টাকা ও দিবা শাখায় ১০,৭৭২ টাকা। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। 

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ১৮৩৫ সালে ইংরেজ মিশনারি মি. রিজ-এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ব্রিটিশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিদ্যালয়। স্কুলটি ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত। ছেলেদের এই স্কুলটিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে দুই শিফটে (প্রভাতী ও দিবা) ক্লাস পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে স্কুলটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২২৫০ জন। 

কলেজিয়েট স্কুলে রয়েছে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ, যেমন: ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্‌যাপন এবং নানা ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড। শিক্ষার্থীদের স্কাউটস, বিএনসিসি, ও রেড ক্রিসেন্টস দলে অংশগ্রহণের সুযোগও দেয় বিদ্যালয়টি।

শ্রেণিভেদে ও বাৎসরিক পরীক্ষা চার্জের ওপর ভিত্তি করে স্কুলের ৩ মাসের ফি ৩৫০-৮০০ টাকা। 

সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কর্তৃক ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত আজিমপুর গভ: গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত একটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্কুলটিতে দুইটি শিফটে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। বর্তমানে এর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০০০ জন। স্কুলটির বর্তমান অধ্যক্ষ গীতাঞ্জলি বড়ুয়া। 

স্কুলটিতে ২০২৪ সালের ভর্তি ফি ১৮২৮ টাকা থেকে শুরু হয়েছে। 

১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়টি ঢাকার আউটার সার্কুলার রোড, মতিঝিল এ অবস্থিত একটি অল বয়েজ সরকারি বিদ্যালয়। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী)। ২টি বড় খেলার মাঠসহ স্কুল ক্যাম্পাসটি ৭.৫ একর জায়গা নিয়ে তৈরি। সকাল ও দুপুরের দুটি শিফটে বর্তমানে স্কুলটিতে অধ্যয়নরত রয়েছে প্রায় ৩০০০ শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ২টি অনুষদ রয়েছে: বিজ্ঞান ও বাণিজ্য। স্কুলে কোনো আর্টস ফ্যাকাল্টি নেই। স্কুলের বর্তমান প্রধান অধ্যক্ষ দেওয়ান তাহেরা আক্তার। 

স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশমুখেই রয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। প্রবেশপথের বাম দিকে প্রধান শিক্ষকের বাসভবন অবস্থিত। বিদ্যালয়ের মূল ভবনের নিচতলায় রয়েছে অডিটরিয়াম। মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি পাঠাগার, যাতে প্রায় ১৫০০০টি বই রয়েছে। এছাড়া ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজনে স্কুলটিতে বিজ্ঞান শিক্ষা সহায়ক ল্যাবরেটরি রয়েছে এবং কম্পিউটারের ব্যবহারিক শিক্ষায় আলাদা কম্পিউটার ল্যাবও রয়েছে। 

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নতমানের শিক্ষার পাশাপাশি শরীরচর্চা, সহশিক্ষা এবং জনস্বার্থমূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থাও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে ২টি বিশাল মাঠ, যেখানে তারা ফুটবল, ক্রিকেট, খো খো, কাবাডিসহ নানান আউটডোর খেলা খেলতে পারে। এছাড়া ইনডোর গেমসের জন্য টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ রয়েছে। এই প্রতিটি খেলার জন্যই স্কুলটির নিজস্ব দল রয়েছে, যারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য রয়েছে বিতর্ক, স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট ও বিএনসিসির কার্যক্রম। 

স্কুলটিতে ২০২৪ সালে ভর্তির আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা। ভর্তির পর প্রতি ৩ মাসের সর্বমোট চার্জ শুরু হয় ১৫১২ টাকা থেকে।  

১৯৬১ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মুহম্মদ ওসমান গণির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় স্থাপিত হয় গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল। এটি একটি অল বয়েজ সরকারি বিদ্যালয়, যেখানে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা আছে। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক হলেন মো. আলমগীর হোসেন তালুকদার। বিদ্যালয়ে প্রভাতী ও দিবা শাখায় শিক্ষাদান করা হয়। প্রতিটি শাখার ব্যাপ্তি পাঁচ ঘণ্টা, যেখানে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মোট ছয়টি ক্লাস এবং মাঝে বিশ মিনিটের একটি বিরতি দেওয়া হয়। প্রতিটি শ্রেণির জন্য ক, খ, গ, ঘ—এই চারটি শাখা রয়েছে এবং প্রতিটি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০ জন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও স্কুলের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিদ্যালয়ে ওমর খৈয়াম, আল বিরুনি, আল মামুন ও সালাহ্‌উদ্দীন- নামে চারটি হাউজের নামকরণ করা হয়েছে। হাউজগুলোর রং যথাক্রমে সবুজ, হলুদ, নীল ও লাল। এছাড়াও স্কুলটিতে দেড় লক্ষ বর্গফুটের একটি মাঠ রয়েছে। মাঠে শিক্ষার্থীদের ভলিবল, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সুযোগের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের প্রাত্যহিক সমাবেশ, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বাৎসরিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। 

গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে প্রায় ৯০০০টি বই সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে, রয়েছে কম্পিউটার ও বিজ্ঞান বিষয়ক ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য মানসম্মত ল্যাবরেটরি। তাছাড়াও রয়েছে চার শতাধিক মানুষের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি নামাজ ঘর। 

রাজধানীর ফুলার রোডে অবস্থিত উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি স্কুল। স্কুলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। উদয়নের ক্যাম্পাস এরিয়া ৩০,০০০ বর্গফুট। স্কুলটির বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় ৪৫০০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। স্কুলটিতে কম্পিউটার ও বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য মানসম্মত ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও স্কুলটির একটি বিতর্ক ক্লাব রয়েছে, যা বিভিন্ন আন্তঃস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করছে। এছাড়াও আছে ক্রিকেট ও ফুটবল দল, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে আন্তঃস্কুল চ্যাম্পিয়নশিপগুলোতে অংশগ্রহণ করে। স্কুলটির শিক্ষার্থীরা পদার্থবিদ্যা ও গণিত অলিম্পিয়াডেও অংশ নেয়। স্কুলটির বর্তমান প্রধান শিক্ষক জহুeরা বেগম। 

উদয়ন স্কুলে শিশু শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। ২০২৪ সালে শিশু শ্রেণির ভর্তি আবেদনের ফি ছিল ২০০ টাকা (+৩০ টাকা অনলাইন চার্জ)। এছাড়া বাংলা মাধ্যমে ভর্তি ফি ৮,০০০ টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০,০০০ টাকা। 

ওপরে উল্লেখিত স্কুলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই মানসম্পন্ন শিক্ষাদান ও শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের সুনাম ধরে রেখেছে। আশা করি, স্কুলগুলো সম্পর্কে এসব তথ্য আপনার সন্তানের জন্য আদর্শ প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে আপনাকে সহায়তা করবে।   

Author

  • Mehelika Anan

    Hello there! I'm Mehelika, an English literature student at ULAB. While reading comes more naturally to me than writing, I've always found it easier to express myself through pen and paper.

    View all posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *